বিজ্ঞাপন

ভেঙে দেওয়া হলো হারেজ বাউলের তবলা দোতারা হারমোনিয়াম

September 1, 2022 | 11:36 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

নড়াইল: নড়াইলের কালিয়ায় লালন সাধক হারেজ ফকিরকে মারধর করে তার আখড়াবাড়িতে থাকা সংগীতচর্চার অনুষঙ্গ হারমোনিয়াম, তবলা, দোতারা, বাঁশিসহ বিভিন্ন উপকরণ ভেঙে দিয়েছে স্থানীয় জামায়াত নেতা আলী মিয়া ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা।

বিজ্ঞাপন

এ অভিযোগে বুধবার (৩১ আগস্ট) বিকেলে সাধক ফকির (৮৪) বাদী হয়ে কালিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এদিকে এ মামলার একদিন পর বৃহস্পতিবার দুপুরে আলী মিয়ার লোকজন হারেজ ফকিরের সাক্ষী প্রতিবেশী  ইসমাইল চৌকিদারসহ চারজন নারী পুরুষকে মারধর করেছে।

লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, কালিয়া উপজেলার পুরুলিয়া ইউনিয়নের নওয়াগ্রামের বাসিন্দা হারেজ ফকির শনিবার (২৭ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে স্থানীয় কিছু ভক্ত নিয়ে সংগীত পরিবেশন করছিলেন। এ সময় স্থানীয় জামায়াতে ইসলামের নেতা আলী মিয়া শেখ, মিন্টু শেখসহ ২০-২৫ জনের একটি দল এসে বাউল সাধককে মারধর, সংগীতের বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র ভাঙচুর করে।

বিজ্ঞাপন

নওয়াগ্রামের বাসিন্দা নড়াইল বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন শীতল বলেন, ‘হারেজ ফকির একজন লালন তরিকার সাধু। নওয়াগ্রামে তার আখড়াবাড়িতে দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে লালন দর্শনের চর্চা করে আসছেন। একজন চিহ্নিত জামায়াত নেতা আলি মিয়ার লোকজন এই সাধককে মারধর ও তার সংগীত চর্চার বাদ্যযন্ত্রগুলো ভেঙে দিয়েছে। আমরা এ ঘটনায় দোষীদের গ্রেফতার করে শাস্তির দাবি জানাই।’

এ প্রসঙ্গে সম্মিলিত সাংস্কৃতি জোট, নড়াইলের সভাপতি মলয় কুন্ডু বলেন, ‘মৌলবাদীরা বারবার সংস্কৃতির ওপর আঘাত হানছে। এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। অবিলম্বে এই মৌলবাদীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

সাধক হারেজ ফকিরের ছেলে মিজান ফকির বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে স্থানীয় সাগরসহ কয়েকজন আমাকে জানায়, তোরে যেন আর এলাকায় না দেখি। এরপর আমি ভয়ে খুলনায় চলে যাচ্ছি। এ সময় মিন্টু শেখসহ কয়েকজন প্রতিবেশী নাজমুল শেখ, তার স্ত্রী হাসমা বেগম ও তার কন্যা ময়নাকে মারধর করেছে এবং তার এখন মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

অভিযুক্ত আলী মিয়া শেখ বলেন, ‘দীর্ঘ বছর ধরে হারেজ ফকির গাঁজা সেবন ও ব্যবসা করে আসছে। সে এলাকার যুব সমাজকে ধ্বংস করছে। তাকে বিভিন্ন সময় নিষেধ করলেও শোনেনি। পুলিশকে জানিয়ে কোনো কাজ হয়নি। শুনেছি স্থানীয় কিছু ছেলেপেলে হারেজের বাড়িতে গিয়েছিল। কিন্তু কী করেছে তা জানি না।’

কালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ইউপি চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম মনি মিয়া বলেন, ‘এলাকার কিছু লোক আমার কাছে হারেজের বিষয়ে নালিশ করতে এসেছিল। আমি হারেজকে নিষেধ করেছি এ সব সেবন না করতে। হারেজকে মারধর কিংবা বাদ্যযন্ত্র কেউ ভাঙচুর করেনি। ওরা মিথ্যা কথা বলেছে। আমার ভাই এই ঘটনায় জড়িত নয়।’

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে সাধক হারেজ ফকির বলেন, ‘ঘটনার দিন রাতে আলী মিয়ার নেতৃত্বে একদল মানুষ আমার দীর্ঘদিনের সাধনা হারমোনিয়াম, তবলাসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র ও ঘরের বিভিন্ন মালামাল ভেঙে ফেলেছে। আমি এ ঘটনার বিচার দাবি করছি।’

আপনি গাঁজা সেবনসহ মাদক ব্যবসায় জড়িত কিনা এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে এখানে সাধনা করছি। এতদিন এ প্রশ্ন ওঠেনি। এখন এ প্রশ্ন উঠছে কেন? তারা সংগীত সাধনা করতে দেবে না বলে এ ধরনের কথা বলছে।’

এ বিষয়ে কালিয়া থানার ওসি শেখ তাসমীম আলম বলেন, ‘এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়েছে। ইসমাইল চৌকিদারকে মারধরের বিষয়টি শুনেছি।  তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সারাবাংলা/একে

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন