বিজ্ঞাপন

মেয়াদহীন লাইসেন্সে ‘পুলিশ ম্যানেজ’ করে চলছিল এসপি রিভার হাসপাতাল

August 10, 2022 | 11:01 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: কামরাঙ্গীরচরের এসপিএ রিভারসাইট মেডিকেল সেন্টারের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে যায় ২০২২ সালের জুন মাসে। স্থানীয়দের অভিযোগ স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় পরিচালনা করা হচ্ছিল হাসপাতালটি। শুধু তাই নয়, হাসপাতালটিতে হওয়া অপ-চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও এর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ কেউ জানাতে পারতো না। নিজেকে সাবেক রাষ্ট্রপতির আত্মীয় পরিচয় দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির মালিক ডা. এম এইচ উসমানি কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশের এসআই মিলন হোসেনসহ প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চালাচ্ছিল এসপিএ রিভারসাইড হাসপাতাল— স্থানীয়দের এমন অভিযোগের সত্যতা মেলে সরেজমিনে।

বিজ্ঞাপন

একইসঙ্গে কোনো মেডিকেল কলেজে পড়ালেখা না করলেও বিএমডিসির নম্বর জালিয়াতি করে এখানে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছিলেন একাধিক ভুয়া চিকিৎসক। স্থানীয়দের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে খোঁজ নিতে গেলে দুইজন সাংবাদিককে পেটায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অভিযোগের জবাব না দিয়ে উল্টো ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক হাসান মিসবাহ ও ভিডিও জার্নালিস্ট সাজু মিয়ার উপরে হামলা করে ক্লিনিকটির মালিক ডা. ওসমান ও তার কর্মীরা। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে আবার পেটানো হয় সাংবাদিকদের।

কামরাঙ্গীর চর থানা পুলিশ কর্মকর্তারা এমন অভিযোগ অস্বীকার করলেও এসআই মিলন হোসেনের কর্মকাণ্ডে লজ্জিত হওয়ার কথা জানায়। প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্সের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা।

মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) সরেজমিনে এসপিএ রিভারসাইট মেডিকেল সেন্টারে গিয়ে তাদের লাইসেন্সের মেয়াদ বিষয়ে জানতে চাইলে কেউ কোনো উত্তর দিতে পারেননি। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্সের তথ্যাদি প্রতিষ্ঠানের ফ্রন্ট ডেস্কে বা সামনে রাখার কথা বলা হলেও তেমন কিছু দেখা যায়নি।

বিজ্ঞাপন

মো. মাসুদ নামে পরিচয় দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা জানান, ডা. ওসমানি স্যার লাইসেন্সের বিষয়ে বলতে পারবে। তবে অন্য বিষয়ে আমি বলতে পারব না।

তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১৬ সাল থেকে রিভারসাইড হাসপাতাল লিমিটেড পরিচালনা করা হয়। তবে প্রথমবারের মতো প্রতিষ্ঠানটি লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। লাইসেন্স অনুমোদনের পরে তার মেয়াদ ছিল চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত। দেশে লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হলেও এই প্রতিষ্ঠানটি তার আওতায় আসেনি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. বেলাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, লাইসেন্সের মেয়াদ ছাড়াও হাসপাতাল পরিচালনা করার বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। খুব দ্রুতই আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে পারব। আজকেই আমরা টিম পাঠাচ্ছি।

বিজ্ঞাপন

লাইসেন্সে মেয়াদ ছাড়া হাসপাতাল পরিচালনার বিষয়ে কিছুই জানতেন না বলে জানিয়েছেন কামরাঙ্গীরচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান। এসআই মিলন হোসেনের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির আলাদা কোনো যোগাযোগ আছে কিনা সে বিষয়েও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে মিলন হোসেন যা করেছে তার জন্যে আমরা লজ্জিত। এটা খুবই আনাড়ির মতো কাজ করেছে যা মোটেও গ্রহণযোগ্য না।

এর আগে কোনো মেডিকেল কলেজে পড়ালেখা না করলেও বিএমডিসির নম্বর জালিয়াতি করে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছিলেন একজন ভুয়া চিকিৎসক— এমন অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকায় এসপিএ রিভারসাইট মেডিকেল সেন্টারে ক্যামেরাপারসন সাজু মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে যান ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক হাসান মিসবাহ। তবে অভিযোগের জবাব না দিয়ে উল্টো সাংবাদিকদের ওপরেই হামলা করেন ক্লিনিক মালিক ডা. ওসমান। তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটির ১৫-২০ জন কর্মী প্রথম দফায় হামলা শেষে পুলিশ ডেকে আনে। কিন্তু পরিচয়পত্র, ক্যামেরা দেখে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরেও ‘ভুয়া সাংবাদিক’ বলে তাদের আবার মারধর করে ক্লিনিক মালিক ওসমান ও কামরাঙ্গীরচর থানার এসআই মিলন।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) বিকেলে সাংবাদিকদের ওপর এই হামলার ঘটনা ঘটে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কামরাঙ্গীরচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ ঘটনায় ইতোমধ্যেই এসআই মিলন হোসেনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ক্লিনিকটির মালিক পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও আমরা তাকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি।’

দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আহত হওয়া সাংবাদিক হাসান মেসবাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য ছিল এসপিএ হাসপাতালটিতে একজন ভুয়া চিকিৎসক বসেন। তিনি বিএমডিসির যে নম্বর ব্যবহার করেন সেটা ভুয়া বলে আমাদের কাছে তথ্য ছিল। সেই তথ্যের ভিত্তিতে আমরা সেখানে যাই এবং হাসপাতালটির মালিক সিও ভুয়া চিকিৎসক ওসমানের সাক্ষাৎকার নিতে শুরু করি। একপর্যায়ে ভুয়া ডাক্তার থাকার বিষয়ে বলা হলে ওসমান বলেন, এই তুই কি আমাকে একজন ভুয়া চিকিৎসক মনে করেছিস? জানিস আমি কে? দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি। এই যা, তোকে আর ইন্টারভিউ দেবো না।’

তিনি আরও বলেন, ‘তখন আমি তাকে বলি যে, আপনার এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলার দারকার নাই। শুধু বলেন, আপনার হাসপাতালে ভুয়া চিকিৎসক বসে কি না। তখন তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে প্রথমে আমার চশমাটা ভেঙে ফেলেন। এরপর আমার গায়ে হাত তোলেন। পরে হাসপাতালের ১৫ থেকে ২০ জন লোক ডেকে আমাদের মারধর করেন। এরপর আমাদের ফোন, গাড়ির চাবি কেড়ে নিয়ে তিনিই পুলিশকে খবর দেন।’

হাসান মিসবাহ বলেন, ‘পুলিশ আসার পর এসআই মিলন আমাকে বলে তুই কোন টিভির সাংবাদিক। তখন আমি তাকে বলি আমরা ইন্ডিপেনডেন্ট টিভি থেকে এসেছি। এবার তিনি সাজুকে বলতে লাগলেন, তোরা যদি আসল সাংবাদিক হয়ে থাকিস তাহলে তোদের কার্ড দেখা। এ সময় সাজু তার কার্ডটি বের করে দেখালে সেটি দেখে বলতে থাকে এই তোরা তো ভুয়া সাংবাদিক।’

তিনি বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তাকে আমাদের সব পরিচয়পত্র দেখানো হয়। আমি বারবার বলার চেষ্টা করছিলাম, আমরা আমাদের অফিস থেকে অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে এখানে এসেছি। আপনি অফিসে ফোন করে বিষয়টি যাচাই করতে পারেন। কিন্তু তিনি আমার কোনো কথা না শুনে সরাসরি তেড়ে এসে আমার মুখে ঘুষি মারেন। এরপর অন্যরা তার সঙ্গে যোগ দেয়।’

আমাদের দু’জনকে সেই এসআইয়ের সামনে আবারও মারধর করা হয়- বলেন হাসান মেসবাহ। তিনি আরও বলেন, ‘তারা আমাদের সঙ্গে থাকা ক্যামেরা ও গাড়ি ভাঙচুর করেছে। আমাদের কাছে অফিসের যাবতীয় সব সরঞ্জামাদি থাকার পরও এসআই ভুয়া সাংবাদিক বলে মারধর করেছে।’

সারাবাংলা/এসবি/এএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন