বিজ্ঞাপন

অনলাইন সেবায় ভেঙেছে ‘পার্কিং সিন্ডিকেট’, আমদানি বেড়েছে বেনাপোলে

August 7, 2022 | 8:23 am

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

যশোর: পশ্চিমবঙ্গে ‘অনলাইন স্লট বুকিং সিস্টেম’ চালু হওয়ায় বেনাপোলে পণ্য আমদানিতে গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে আমদানি পণ্য দেশে প্রবেশ করতে পেট্রাপোলে ২৫ থেকে ৪০ দিন অপেক্ষা করতে হতো। গুনতে হতো বাড়তি ডিটেনশন চার্জ ও গোডাউন ভাড়া। আমদানিকারকদের মতে, এই খাতে বছরে বাড়তি ব্যয় ছিল প্রায় হাজার কোটি টাকা। এখন তিনদিনেই পেট্রাপোল থেকে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করছে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক। দ্রুততম সময়ে পণ্য আমদানির পাশাপাশি সাশ্রয় হচ্ছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা।

বিজ্ঞাপন

পেট্রাপোল বন্দর সূত্রে, বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের স্থলবন্দরগুলো দিয়ে ট্রাকে পণ্য রফতানি সংক্রান্ত কাজে স্বাচ্ছন্দ্য আনতে সম্প্রতি পরিবহন দফতর অনলাইন স্লট বুকিং সিস্টেম বা ‘সুবিধা ভেহিকেলস ফেসিলিয়েশন সিস্টেম’ চালু করেছে। পুরানো ব্যবস্থায় বাইরের রাজ্য থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রাক পেট্রাপোল বন্দরে যাওয়ার আগে বনগাঁ শহরের তিনটি জায়গায় (কালীতলা, কালীবাড়ি মোড় এবং বিএসএফ ক্যাম্প মোড়) পরিবহন দফতরের কাছে এন্ট্রি করাত। তারপর সীমান্তে যাওয়ার জন্য ছাড়পত্রের জন্য অপেক্ষা করত। এই ছাড়পত্র মিলতে একমাস বা তারও বেশি সময় লাগত। ততদিন ট্রাকের মালামাল স্থানীয় গোডাউন বা স্থানীয় ট্রাকে তুলে বেসরকারি পার্কিং লটে রাখা হতো। বাইরে থেকে আসা বেশিরভাগ ট্রাক বনগাঁয় পণ্য নামিয়ে ফিরে যেত। এ কারণে বনগাঁয় বহু সংখ্যক গোডাউন এবং পার্কিং লট রয়েছে।

বনগাঁর পার্কিং ও গোডাউন ঘিরে এই সিন্ডিকেটকে কালীতলা সিন্ডিকেটও বলা হয়। এই চক্রে ২৫ থেকে ৪০ দিন আটকে রেখে পণ্যবোঝাই প্রতি ট্রাককে গড়ে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা বাড়তি গুনতে হতো। বছরে যা প্রায় হাজার কোটি টাকা।

ভারতীয় পরিবহন দফতরের তথ্য অনুযায়ী, নতুন ব্যবস্থাপনায় ভারতের যেকোনো প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে ট্রাকে পণ্য পরিবহনের জন্য আগেভাগেই অনলাইনে ‘স্লট বুকিং’ করতে পারবেন। এ কাজে চেসিসের জন্য লাগবে ৫ হাজার টাকা এবং পণ্যবোঝাই ট্রাকের জন্য ১০ হাজার টাকা। নতুন এই ব্যবস্থাপনায় ভেঙে গেছে কালীতলা পার্কিং সিন্ডিকেট।

বিজ্ঞাপন

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার বনগাঁ কালিতলা পার্কিং সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে অনলাইনে স্লট বুকিং চালু করায় ভারতের যেকোনো প্রদেশ হতে ট্রাক কোলকাতায় এসে পৌঁছানোর পর ১-২ দিনের মধ্যে বেনাপোলে পৌঁছে যাচ্ছে। ফলে খুশি ব্যবসায়ীরা। উভয় দেশের সরকারি কর্মকর্তারা বিশেষ করে ভারতীয় পরিবহন দফতর, বন্দর কাস্টমস এবং বেনাপোল কাস্টমস ও পোর্ট এলপিআই নিয়মিত তদারকি করলে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশে বনগাঁ পার্কিং সিন্ডিকেটের ডিটেনশন চিরতরে হারিয়ে যাবে।’

বাংলাদেশ-ভারত চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, বাংলাদেশের প্রতিটি আমদানিকারক ঋণপত্র খোলার সময় পণ্যের মূল্যের সঙ্গে বনগাঁ, কালিতলা পার্কিংয়ের ৩০-৩৫ দিনের ট্রাক ডিটেনশন চার্জ ও মালবাহী ট্রাক চার্জ উল্লেখ করে তার ওপর আমদানিকারককে শুল্ক পরিশোধ করতে হতো। গত এক দশক ধরে প্রতি বছর প্রায় হাজার কোটি টাকা শুধু কালিতলা পার্কিং ও ডিটেনশন চার্জ বাবদ দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, দিল্লি, মুম্বাই অথবা ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে একটি ট্রাক পেট্রাপোলে আসার পর পণ্য লোকাল গোডাউনে আনলোড করে রাখত। পরবর্তীতে সেই একই পণ্য দুইটি ট্রাকে লোড করে বেনাপোলে পাঠানো হতো, যা ঋণপত্রের শর্ত বহির্ভূত। এলসিতে পার্ট শিপমেন্ট অনুমোদন থাকলেও ট্রান্সশিপমেন্টের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকে। বনগাঁ পার্কিং সিন্ডিকেট ট্রাকের ভুয়া নম্বর দিয়ে এন্ট্রি করে রাখা হতো। পরবর্তীতে সেই সিরিয়াল নম্বর ৫০ হাজার টাকায়ও বিক্রি করা হতো।

পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ভুয়া এন্ট্রি বন্ধ হওয়ায় এখন দুই থেকে তিনদিনের মধ্যে গাড়ি বাংলাদেশ পৌঁছে যাচ্ছে। আগামী দিনে এই বন্দরে কাজের পরিমাণও বাড়বে। রফতানি বাণিজ্য করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীদের উৎসাহ বাড়বে বলে মনে করছেন শুল্ক দফতরের কর্মকর্তারা।

বিজ্ঞাপন

বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বলেন, ওপারে ‘অনলাইন স্লট বুকিং সিস্টেম’ চালু হওয়ায় পণ্য আমদানিতে দীর্ঘসূত্রিতা কেটেছে। দুই দেশের সরকারের চেষ্টায় ভারতের রাজ্য সরকারের এই নতুন নির্দেশে পেট্রাপোলের আমদানি বাণিজ্যে গতি এসেছে, গতি এসেছে বেনাপোলেও। আমরা আশাবাদী আমদানি-রফতানি বাণিজ্য আরও গতিশীল হবে। ব্যবসায়ীরা পেট্রাপোল-বেনাপোল বন্দর ব্যবহারে আরও আগ্রহী হবে।

সারাবাংলা/এনএস

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন