বিজ্ঞাপন

পাহাড়ে ফের ইউপিডিএফ-জেএসএস বৈরিতা!

July 14, 2022 | 11:02 am

প্রান্ত রনি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাঙ্গামাটি: পাহাড়ের পূর্ণ সায়ত্তশাসনের দাবিতে প্রতিষ্ঠিত প্রসীত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) বন্ধুত্বে চিড় ধরার ব্যাপারটি ফের সামনে এসেছে মঙ্গলবার (১২ জুলাই) জীবন ত্রিপুরা নামের এক ইউপিডিএফ কর্মী খুনের ঘটনায়। প্রতিক্রিয়ায় জেএসএসকে খুনোখুনি বন্ধ ও সমঝোতা রক্ষার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ইউপিডিএফ।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, মঙ্গলবার সকালে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার বাবুছড়ায় জীবন ত্রিপুরাকে সশস্ত্র হামলায় হত্যার ঘটনায় সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএসকে দায়ী করছে ইউপিডিএফ।

এ ব্যাপারে সংগঠনটির খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের সংগঠক ও কেন্দ্রীয় মুখপাত্র অংগ্য মারমা বলেছেন, সন্তু লারমাকে অবিলম্বে খুনের রাজনীতি বন্ধ করে ২০১৮ সালের সমঝোতা শর্ত মেনে চলতে হবে।

তিনি বলেন, জীবন ত্রিপুরা সাংগঠনিক কাজে বাবুছড়া যাচ্ছিলেন। এ সময় ধনপাদা নামক এলাকায় ওঁৎ পেতে থাকা জেএসএসের সশস্ত্র সন্ত্রাসী সদস্য ডা. জ্ঞান, পাভেল, বরুণ ও রমেশের নেতৃত্বে তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালালে তিনি ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান।

বিজ্ঞাপন

এদিকে সংগঠনে ভাঙন, একের পর এক হামলা-মামলায় ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়া পাহাড়ের সবচেয়ে পুরাতন দুই আঞ্চলিক দলের বর্তমান কার্যক্রমে পুরাতন সখ্যতা-সমঝোতা ভেঙে রাজনীতিতে যে নতুন মেরুকরণ হতে যাচ্ছে তার আঁচ লেগেছে জনমনে।

২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ আদর্শচ্যুত হয়েছে উল্লেখ করে দলটির প্রধান প্রসীত খীসাকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মার নেতৃত্বে নতুন সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)। ইউপিডিএফ এ সেই প্রথম ভাঙন। শুরু থেকেই তাদেরকে ‘মুখোেশ বাহিনী’ হিসেবে উল্লেখ করে আসছিল প্রসীতের ইউপিডিএফ।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে ইউপিডিএফ (প্রসীত) এবং ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)। ২০১৮ সালের ১৮ মার্চ ইউপিডিএফের সহযোগী সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের দুই নেত্রীকে অপহরণের মধ্য দিয়ে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দেয় ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)। অপহরণের ৩২ দিন পর তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) প্রতিষ্ঠার পর ২০০৭ সালে সন্তু লারমার জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ভেঙে সুধাসিন্দু খীসার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে সাংগঠনিক কাজ শুরু করে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)। তখন পাহাড়ের বিবাদমান চার দল তিন ভাগে ভাগ হয়। এরই প্রেক্ষিতে সন্তু লারমার জেএসএস আর প্রসীত খীসার ইউপিডিএফের মধ্যকার ‘শত্রুর শত্রু-বন্ধু’ এমন স্টাইলে রাজনৈতিক সমঝোতা হয়।

সেই সমঝোতার অন্যতম শর্ত ছিল বিবাদমান রাজনৈতিক দল দুইটির মধ্যকার অস্ত্র বিরতি, এক এলাকায় অন্য পার্টির লোকজনের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করা। তবে নিজ এলাকায় নিয়ন্ত্রণ ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড যে যার মতন পালন করা।

২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইউপিডিএফ নিয়ন্ত্রিত এলাকা হিসেবে পরিচিত রাঙ্গামাটির কুতুকছড়িতে প্রকাশ্যে ইউপিডিএফ-জেএসএস নেতাদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনি প্রচারণা চালিয়েছেন জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সমর্থিত প্রার্থী ও সাবেক এমপি ঊষাতন তালুকদার।

হঠাৎ ইউপিডিএফ সদস্য হত্যার ঘটনায় ২০১৮ সালের ওই সমঝোতা রক্ষার কথাই বারবার সামনে আসছে। যদিও তাদের সমঝোতা দীর্ঘ হয়নি মাত্র চার বছরের মাথায় ২০২১ সাল থেকেই নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ফের ইউপিডিএফ-জেএসএসের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিপক্ষের গুলিতে ইউপিডিএফ কর্মী খুনের ঘটনায় ইউপিডিএফ-জেএসএস বৈরিতা নতুন করে সামনে আসছে। পাহাড়ের রাজনৈতিক মেরুকরণ এখন কোন পথে, সেই প্রশ্নের উত্তর শিগগিরই মিলবে মনে করছেন বিশ্লেষকদের অনেকেই।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/একেএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন