বিজ্ঞাপন

সময় মেলেনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর, ৫ বার পেছাল ‘ভিটামিন এ’ ক্যাম্পেইন

June 11, 2022 | 12:35 pm

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশের ছয় থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুদের ভিটামিন এ প্লাস ক্যাপসুল খাওয়ানোর ক্যাম্পেইন শুরু হওয়ার কথা ছিল ২৮ মে। পরবর্তী সময়ে তারিখ পরিবর্তন করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান (আইপিএইচএন) জানায়, ৫ থেকে ৮ জুন পর্যন্ত চারদিন ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন চলবে। সরকারিভাবে নাগরিকদের মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়ে জানানো হয় ক্যাম্পেইনের তথ্য। একইসঙ্গে দেশের প্রায় সব স্থানেই জেলা সিভিল সার্জন অফিস ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমেও বিষয়টি জানায়।

বিজ্ঞাপন

নির্ধারিত তারিখে ৬ থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুদের নিয়ে তাদের অভিভাবকরা রাজধানীসহ সারাদেশে থাকা নির্ধারিত কেন্দ্রে গেলেও সন্তানের জন্য পাননি ভিটামিন এ ক্যাপসুল। তাদের জানানো হয় সরকারিভাবে নতুন তারিখ জানানো হবে পরে। কিন্তু কবে সেটি তা জানা নেই।

এভাবে প্রথম ঘোষণার ১৪ দিনে এখন পর্যন্ত পাঁচবার তারিখ পরিবর্তন করা হলেও শুরু করা সম্ভব হয়নি ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন। ফলে শিশু ও তাদের অভিভাবকরাই নয় বরং বিপাকে পড়ে বিভ্রান্তিতে আছেন দেশের উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক প্রতিবার শিশুদের এই ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন উদ্বোধন করে থাকেন। আর তার পক্ষ থেকে কোনো সময় না পাওয়ার কারণে একাধিকবার পেছাতে হয়েছে ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন। কর্তৃপক্ষ আশা করছে ১৫ জুনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ক্যাম্পেইনের কার্যক্রম উদ্বোধন করতে পারবেন। ১৯ জুন পর্যন্ত চারদিনব্যাপী এই কার্যক্রম চালানো হবে।

বিজ্ঞাপন

তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সময় না মেলার কারণেই পিছিয়েছে এমন অভিযোগ মানতে রাজি নন জাতীয় পুষ্টিসেবা (এনএনএস) এর লাইন ডিরেক্টর ডা. এস এম মোস্তাফিজুর রহমান। নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দেওয়া ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজের ক্যাম্পেইনের কারণে ভিটামিন এ ক্যাপসুল দেওয়া সম্ভব হয়নি বলে দাবি এই কর্মকর্তার।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রতিবারই লাইন ডিরেক্টর ডা. এস এম মোস্তাফিজুর রহমানের সই করা প্রজ্ঞাপনেই পিছিয়েছে ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন। এসব ক্ষেত্রেই উল্লেখ করা হয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রীর ভিন্ন ভিন্ন তারিখে ক্যাম্পেইন উদ্বোধন করার সম্মতি জানানোর কথা। সারাবাংলা ডট নেটের কাছে এসব তথ্য সংরক্ষিত আছে। নতুনভাবে তারিখ ঘোষণা করা হলেও এখন পর্যন্ত তা নাগরিকদের জানানোর জন্য কোনো উদ্যোগও দেখা যায়নি।

বিজ্ঞাপন

ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন কেন জরুরি?

ছয় থেকে ৫৯ মাস বা পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশুদের মৃত্যুঝুঁকি কমিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ভিটামিন এ ক্যাপসুল দেওয়া হয়ে থাকে। একইসঙ্গে শিশুদের ডায়রিয়ার ব্যাপ্তিকাল কমানো ছাড়াও শুধুমাত্র অপুষ্টিজনিত অন্ধত্ব ও রাতকানা রোগ থেকে রক্ষার জন্যেও দেওয়া হয়ে থাকে ভিটামিন এ। আর তাই ভিটামিন এ-এর অভাবজনিত সমস্যা প্রতিরোধে সরকার বছরে দুইবার জাতীয়ভাবে ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন করে থাকে।

সারাদেশে একইসময়ে শুরু হওয়া এই ক্যাম্পেইনের উদ্দেশ্য ছয় থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুদের মধ্যে ভিটামিন এ’র অভাবজনিত রাতকানা রোগের প্রাদুর্ভাব ১ শতাংশের নিচে কমিয়ে আনা এবং তা অব্যাহত রাখা। এই বয়সী শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে অপুষ্টি জনিত মৃত্যু প্রতিরোধ করা।

২০২২ সালে জাতীয় ভিটামিন ‘এ প্লাস’ ক্যাম্পেইনের প্রতিপাদ্য-শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ খাওয়ান, শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি কমান।

বিজ্ঞাপন

ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন, ২০২২ প্রেক্ষাপট

দেশে ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন নিয়ে প্রথম প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয় ২০২২ সালের ১২ মে। এই প্রজ্ঞাপনের সূত্র ধরে ১৭ মে দেওয়া আরেকটি প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, নিউট্রিশন ইমপ্লিমেন্টেশন কোঅর্ডিনেশন কমিটির (এনআইসিসি) সভায় ২৮ মে ২০২২ তারিখে ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন উদযাপনের তারিখ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এর আগে ১৬ মে স্টিয়ারিং কমিটি ফর নিউট্রেশন ইমপ্লিমেন্টেশন (এসসিএনআই) কমিটির সভায় ৪ থেকে ৭ জুন পর্যন্ত চার দিনব্যাপী জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন উদযাপন করা হবে। উভয়ক্ষেত্রেই জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের এনএনএস বিভাগের লাইন ডিরেক্টর ডা. এস এম মোস্তাফিজুর রহমানের সই করা প্রজ্ঞাপনের কপি পাঠানো হয় দেশের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের পাশাপাশি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েও।

পরবর্তীতে ২৫ মে একই কর্মকর্তার সই করা আরেকটি প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক ৫ জুন জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন উদ্বোধন করার সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। আর তাই ৪ জুনের পরিবর্তে ৫ জুন থেকে ৮ জুন পর্যন্ত ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন উদযাপন করার প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয় স্বাস্থ্য বিভাগের সবাইকে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে সরকারিভাবে নাগরিকদের মোবাইলে এসএমএস পাঠানোর পাশাপাশি গণমাধ্যমেও প্রচার করা হয় এই তথ্য। নির্দেশনা অনুযায়ী ৫ জুন শিশুদের নিয়ে কেন্দ্রে গেলেও ফিরে আসতে হয় অভিভাবকদের। এ দিন কেনো ক্যাম্পেইনে শিশুদের কেনো ভিটামিন এ দেওয়া হচ্ছে না তা জানাতে না পারলেও কেন্দ্রগুলো থেকে বলা হয়, পরবর্তী তারিখ ঠিক হলে তা জানানো হবে।

২৯ মে আরেকটি প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয়। আগের তিনবারের মতো এই এই প্রজ্ঞাপনেও সই করেন জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের এনএনএস বিভাগের লাইন ডিরেক্টর ডা. এস এম মোস্তাফিজুর রহমান।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক ৫ জুনের পরিবর্তে ১২ জুন জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন উদ্বোধন করার জন্য সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। আর তাই ৫ জুনের পরিবর্তে ১২ জুন থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন উদযাপন করার প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয় স্বাস্থ্য বিভাগের সবাইকে।

তবে ৯ জুন আরেকটি প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন উদযাপনের তারিখ আবার পরিবর্তন হয়েছে। আগের চারবারের মতো এই প্রজ্ঞাপনেও সই করেন জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের এনএনএস বিভাগের লাইন ডিরেক্টর ডা. এস এম মোস্তাফিজুর রহমান।

প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক ১২ জুনের পরিবর্তে ১৫ জুন জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন উদ্বোধন করার জন্য সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। আর তাই ১২ জুনের পরিবর্তে ১৫ জুন থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন উদযাপন করার প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয় স্বাস্থ্য বিভাগের সবাইকে।

শিশু ও অভিভাবকদের ভোগান্তি

রাজধানীর উত্তরায় বসবাস করা রাজীব ভৌমিক দম্পতির দুই সন্তানের বয়সই ৫৯ মাসে কম। স্বামী অফিসে ব্যস্ত থাকায় রাজীব ভৌমিকের স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে একাই উত্তরা ১১ নং সেক্টরের কল্যাণ সমিতির অফিসে যান ভিটামিন এ ক্যাপসুল বাচ্চাদের জন্য নিতে। তবে জানতে পারেন সেখানে ভিটামিন এ ক্যাপসুল দেওয়া হচ্ছে না।

রাজীব ভৌমিকের স্ত্রী সোমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘বড় মেয়ে আমার পাশেই একটা স্কুলে পড়ে। একদিকে কোলের শিশুকে নিয়ে বড় মেয়ের স্কুলে যাই। দেড়টা বাজে ওর স্কুল ছুটি শেষে দুইজনকেই নিয়ে আগে যাই ভিটামিন এ খাওয়ানোর জন্য। কিন্তু সেখানে জানানো হলো, তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। অথচ সেই বিষয়ে কোনো তথ্যই দেওয়া হয়নি।’

‘দেশের মানুষের পুষ্টি বা শিশুদের ভিটামিন বিষয়ে এতটা উদাসীন কিভাবে হতে পারে সরকার?— সেই প্রশ্ন কার কাছে করব? অন্তত পরিবর্তনের তারিখটা যদি আগে জানাত তবে দুই মেয়েকে নিয়ে রোদে আমার ঘুরতে হতো না। শুধু আমিই না, আশেপাশের অনেকেই কিন্তু সেখানে ছিল তাদের বাচ্চাদের নিয়ে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর জন্য’ বলেন ওই অভিভাবক।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাস করা সোহেল ইসলাম দম্পতির অবশ্য এর চাইতে বেশি কষ্ট করতে হয়েছে দুই বাচ্চাকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল দেওয়ার আশা নিয়ে বের হয়ে। প্রতিবারের মতো বাসার পাশেই থাকা কেন্দ্রে ভিটামিন এ ক্যাপসুল দেওয়ার জন্য সন্তানদের নিয়ে যান দুইজনেই। তবে এবারে সেই কেন্দ্রে মেলেনি ভিটামিন এ ক্যাপসুল। কোথায় দেওয়া হচ্ছে তাও তারা জানে না বলে জানানো হয়। সন্তানের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে পারে বা কোনো ধরনের সমস্যা যেন না হয় সেই আশঙ্কা থেকে তারা দুই সন্তানকে নিয়েই একাধিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে গেলেও কোনো তথ্য জানাতে পারেনি কেউ। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ক্যাম্পেইনের তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে।

সোহেল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাচ্চাদের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়াতে হবে আর তাই ওদের মা বলেছিল অফিসে না যাওয়ার জন্য। নির্ধারিত তারিখেই গেলাম তাই অফিস থেকে ছুটি নিয়ে। কিন্তু গিয়ে দেখি কেউ নেই। পরে অন্যান্য হাসপাতালেও ঘুরলাম কিন্তু পেলাম না। তখন সন্তানদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ফোন করলাম। আর তখন জানতে পারলাম ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইনের তারিখ পরিবর্তন হওয়ার কথা।’

তিনি বলেন, ‘তারিখ দিয়ে সরকারিভাবেই জানালো ক্যাম্পেইন হবে। কিন্তু যখন সেটি বাতিল হলো তা আর জানায়নি। আমরা যতগুলো জায়গায় গেছি প্রায় সবখানেই দেখেছি অনেক অভিভাবক তাদের বাচ্চাদের নিয়ে এসেছেন। সবারই কমবেশি ব্যক্তিগত নানা কাজ বাদ দিয়ে সেখানে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু আসলে মানুষের ভোগান্তি নিয়ে মনে হয় না কারও মাথা ব্যথা আছে।’

কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়িসহ দেশের আরও বেশ কিছু এলাকার নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলেও প্রায় একই রকমের তথ্য পাওয়া গেছে। সরকারিভাবে এসএমএস পেয়ে কেন্দ্রে গেলেও কারো মেলেনি ভিটামিন এ ক্যাপসুল। তারিখ যে পরিবর্তন করা হয়েছে সেই বিষয়েও কোনো তথ্য জানানো হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে।

যা বলছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান (আইপিএইচএন)?

দেশের একাধিক জেলার সিভিল সার্জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাপসুল ক্যাম্পেইন নিয়ে তারাও রয়েছেন দ্বিধায়। কারণ প্রতিবার তারিখ পরিবর্তন করে ব্যবস্থা নিতে বলা হলেও আসলে সেই তারিখও পাল্টাচ্ছে। আর তাই শিশুদের নিয়ে আসা অভিভাবকদের কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছে না বলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যায় থেকেও অভিযোগ আসছে। আর প্রতিবারই তারিখ পালটে দেওয়ার কারণে গণমাধ্যমের কর্মীরাও বিভ্রান্ত হচ্ছে নানাভাবে। কারণ ক্যাম্পেইনকে সামনে রেখে প্রায় সব জেলাতেই গণমাধ্যমের কাছে আলাদাভাবে ব্রিফিং করা হয়েছে।

তবে জাতীয় পুষ্টিসেবা বিভাগের লাইন ডিরেক্টর ডা. এস এম মোস্তাফিজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘৪ জুন থেকে দেশের কোভিড-১৯ মহামারি নিয়ন্ত্রণের ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছিল। এক সপ্তাহ ধরে বুস্টার ডোজ ক্যাম্পেইন চালানো হয় দেশে। আর তাই ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন পেছানো হয়। কারণ যারা বুস্টার ডোজ দেয় আমাদের এখানে তারাই আবার ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ায়। কিন্তু দুইটা ক্যাম্পেইন তো আর একসঙ্গে চালানো সম্ভব না। সেজন্য পেছানো হয়েছে ক্যাম্পেইন।’

নাগরিকদের কাছে ক্যাম্পেইন বাতিলের তথ্য না পৌঁছানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘খুব একটা বেশি সমস্যা হওয়ার কথা এখন পর্যন্ত শুনিনি। তবে যদি কারও সমস্যা হয়ে থাকে তবে দুঃখ প্রকাশ করতেই হয়। কিন্তু এবার আর তারিখ পরিবর্তন হবে না।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সময় না মেলায় বারবার পেছানো হয়েছে ক্যাম্পেইনের তারিখ? এমন প্রশ্নের জবাবে এই লাইন ডিরেক্টর বলেন, ‘বিষয়টা আসলে তেমনও না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয় প্রতিবছর এই ক্যাম্পেইন উদ্বোধন করে থাকেন। এবারও করবেন এটিই স্বাভাবিক বিষয়। তবে ওনার সময় না মেলার কারণে তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে এমনটা বলা সঠিক হবে না।’

প্রজ্ঞাপনের তথ্য সারাবাংলার কাছে সংরক্ষিত আছে জানার পরে তিনি বলেন, ‘আসলে অনেকেই না বুঝে কিছু বলে থাকলে সেটির জন্য দোষ দেওয়া ঠিক হবে না।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য মেলেনি

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সঙ্গে একাধিকবার চেষ্টা করলেও এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।একইভাবে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিঞার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।

উল্লেখ্য, ১৫ থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত চারদিন ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন শুরু হবে পুরো দেশে। ক্যাম্পেইন চলাকালে ৬ থেকে ১১ মাস বয়সী শিশুকে একটি নীল রঙের এবং ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুকে একটি লাল রঙের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। এর পাশাপাশি জন্মের পরপর নবজাতককে শালদুধ খাওয়ানো, ৬ মাস পর্যন্ত শিশুকে শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো, শিশুর ৬মাস পূর্ণ হলে মায়ের দুধের পাশাপাশি পরিমাণমত ঘরে তৈরি সুষম খাবার খাওয়ানোর বার্তাও প্রচার করা হবে। সকাল ৮ টা থেকে বাকল ৪ টা পর্যন্ত টিকা কেন্দ্রে এই টিকা খাওয়ানো হবে।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই ক্যাম্পেইনে একটি শিশুও যাতে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়া থেকে বাদ না পড়ে সে জন্য ১৫ জুনের পর আরো ৪ দিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাদপড়া শিশু অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালিত হবে। দুর্গম এলাকায় বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চল, হাওড়-বাওড় ও চর এলাকায় ইউনিয়ন ভিত্তিক বাদপড়া শিশু অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

সারাবাংলা/এসবি/একে

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন