বিজ্ঞাপন

অটিজম সমস্যা, সেবা ও ‘স্পিচ এইড বাংলাদেশ’

May 13, 2022 | 10:35 am

রাহাতুল ইসলাম রাফি, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট

আড়াই বছর বয়সে পা দিয়েছে তাফহীম (ছদ্মনাম)। স্বাভাবিকভাবে এই বয়সে টুকটাক কথা বলতে পারার কথা থাকলেও তাফহীমের ক্ষেত্রে সেটা ঘটছে না। তাফহীমের বেসরকারি চাকরিজীবী বাবা যোগাযোগ করেছেন ‘স্পিচ এইড বাংলাদেশ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে। এখান থেকে তিনি জানতে পারলেন, তার সন্তান যে সমস্যায় ভুগছেন, তার নাম ‘স্পিচ ডিলে’। এই সমস্যায় ভোগা শিশুরা কথা বলতে শুরু করে দেরিতে।

বিজ্ঞাপন

তাফহীমের বাবা বলেন, গ্রামাঞ্চলে এই বিষয়টিকে অন্যভাবে ট্রিটমেন্ট করতে বলে। যেগুলোর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। আমি আমার এক কলিগের দেওয়া খোঁজে সরাসরি এখানে এসেছি। সন্তানকে প্রয়োজনীয় থেরাপি দিচ্ছি।

তাফহীমের মতো অসংখ্য শিশু অটিজম সংক্রান্ত এই ধরনের সমস্যায় ভুগছে। শিশুদের ক্ষেত্রে স্পিচ ডিলে ছাড়াও ডেভেলপমেন্টাল ডিলে, কমিউনিকেশন ডিফিশিয়েন্সিসহ নানান ধরনের সমস্যার কথা শোনা যায়। অনেকসয় এসব শিশুদের বাবা-মায়েরাও মানসিকভাবে বিব্রত হয়ে পড়েন। তবে এসব সমস্যার সমাধানের পথও আছে অসংখ্য।

এসব লক্ষ্য সামনে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর উদ্যোগে ২০২১ সালের ৯ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা পায় ‘স্পিচ এইড বাংলাদেশ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির চেম্বার রাজধানীর নিউপল্টনে অবস্থিত।

বিজ্ঞাপন

প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ দফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার শিকার সর্বমোট ২৭২জন শিশুকে সেবা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এদের মধ্যে স্পিচ ডিলে, হাইপার অ্যাকটিভ, কমিউনিকেশন ডেফিশিয়েন্সি, ডেভেলপমেন্টাল ডিলে, অটিজমসহ এই ধরনের নানান প্রতিবন্ধকতা নিয়ে আসা শিশুদের সেবা প্রদান করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেকগুলো বিষয় নিয়ে তারা সেবাপ্রদান করলেও তাদের মূল উদ্দেশ্য—‘স্পিচ ডিলে’ অর্থাৎ সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও যেসব শিশু কথা বলে না, তাদের নিয়ে কাজ করা।

বিজ্ঞাপন

অটিজম সংক্রান্ত সেবার ক্ষেত্রে অনেকসময় সমন্বিত সেবার প্রয়োজন পড়ে। এক্ষেত্রে কয়েকধরনের থেরাপী সমন্বয় করতে হয়।

এই প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির সিইউ কৌশিক আহমেদ কবির সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সর্বমোট ৬টা প্রফেশনাল আছে। এগুলো হলো—স্পিচ থেরাপী, অকুপেশনাল থেরাপী, ফিজিউ থেরাপী,প্যাডিয়াট্রিক নিউরোলজিস্ট, স্পেশাল এডুকেটর, সাইকোলোজিস্ট, নিউট্রিশনিস্ট। অনেকসময় চিকিৎসেবার প্রক্রিয়াটা দীর্ঘ হয় এবং একাধিক প্রফেশনালের দরকার পড়ে। আমরা এই প্রক্রিয়াও সেবা দিয়ে থাকি।

অটিজম সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে আসা শিশুদের বাবা-মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি। এই প্রসঙ্গে কৌশিক আহমেদ কবির বলেন, ‘সেশন গুলোতে শিশুর অভিভাবকদের পরামর্শ এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় যাতে তারা থেরাপিউটিক অ্যাকটিভিটি গুলো নিজেরাই বাসায় তাদের বাচ্চাদের সাথে করতে পারে। এ ছাড়াও, এই ধরনের সমস্যাগ্রস্থ শিশুদের বাবা-মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও আমরা প্রয়োজনীয় পরামর্শ আমরা দিয়ে থাকি’

এদিকে, সেবাপ্রক্রিয়া আরও সহজলভ্য করতে সম্প্রতি একটি ওয়েবসাইট চালু করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
www.speechaidbangladesh.com ঠিকানায় পাওয়া যাবে প্রয়োজনীয় তথ্যসেবা।

বিজ্ঞাপন

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ কর্মকর্তা আনোয়ারুল কবির দিপু সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আমাদের সেবা গুলোকে আরো সহজলভ্য করতে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেছি যেখানে যে কেউ যে কোনো সময় এসে আমাদের নির্ধারিত সেবাসমূহ গ্রহণ করতে পারে।

এদিকে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেসব শিশু থেরাপি সেশনের আওতার মধ্যে আসতে পারে না, তাদের অনলাইনে সেবা প্রদানের ব্যবস্থাও রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। +8801568085265 এই নম্বরে যোগাযোগ করে সরাসরি সেবা গ্রহণ করার সুযোগ রেখেছেন তারা।

প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা মো. আশরাফুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের সেবাদান একটি বহুমুখী প্রচেষ্টা। এখানে ভিন্ন ভিন্ন পেশাদারদেরকে একটি টিম হয়ে কাজ করতে হয়। তাই আমরা স্পিচ এবং অকুপেশনাল থেরাপির পাশাপাশি পেডিয়াট্রিশিয়ান, সাইকোলজিস্ট ও নিউট্রিশনিস্টদের যুক্ত করছি।’

প্রতিষ্ঠানটির এই সহ-প্রতিষ্ঠাতা জানিয়েছেন, প্রচলিত অন্যান্য থেরাপি সেন্টারের তুলনায় ‘স্পিচ এইড বাংলাদেশ’ অনেক কম মূল্যে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের অনলাইন থেরাপি সেবার সেশন ফি ২০০ টাকা। যেখানে প্রচলিত মাধ্যমে ৫০০-২৫০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে প্রতি সেশন। একটি বিশেষ শিশুকে সপ্তাহে ৩-৬ টি সেশন নিতে হয় সাধারণত। তাই অনেকের জন্য এটা অনেক ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়ায়। এবং শেষ পর্যন্ত থেরাপি বন্ধ করে দিতে হয়। সেজন্য আমরা একটি নামমাত্র বিনিময় মূল্য রেখেছি’

এদিকে, দেশের চৌষট্টি জেলায় অটিজম সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার ইচ্ছের কথা জানিয়েছেন সিইউ কৌশিক আহমেদ কবির। তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে টাঙ্গাইলে একটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। প্রশিক্ষণ পরবর্তী ভলেন্টিয়ারদের সার্টিফিকেটও দিয়েছি। আমরা চাই, প্রত্যন্ত অঞ্চলে অটিজম নিয়ে সচেতনতা যেন বৃদ্ধি পায়। দেশের সবগুলো জেলায় আমরা কাজ করতে চাই’

সারাবাংলা/আরআইআর/এএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন