বিজ্ঞাপন

সাংবাদিকরা বিষয়কে অহেতুক জটিল করেছেন: রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর ভাগ্নে

May 8, 2022 | 11:23 pm

লোকাল করেসপন্ডেন্ট

ঈশ্বরদী (পাবনা): বিনা টিকেটের তিন যাত্রীকে জরিমানার ঘটনায় বরখাস্ত হয়েছিলেন ট্রেনের টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) শফিকুল ইসলাম। ওই তিন যাত্রীই রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের স্ত্রীর আত্মীয়। এ ঘটনা ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’তে পরিণত হলে এখন এর পেছনে সাংবাদিকদের দায় দেখছেন মন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মী আক্তার মনির ভাগনে ইমরুল কায়েস প্রান্ত।

বিজ্ঞাপন

ওই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর এমন ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটান প্রান্ত। বলেন, আমরা বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই দেখছিলাম। অথচ সাংবাদিকরা সামান্য একটি বিষয়কে অহেতুক টানা-হেঁচড়া করে জটিল করে তুলেছেন।

রোববার (৮ মে) এ ঘটনায় তদন্ত কমিটির কার্যক্রম শুরু করার কথা ছিল সকাল ১০টায়। তবে দুপুর ১২টার দিকে শুরু হয় সে কার্যক্রম। পাকশী বিভাগীয় সহকারী পরিবহন কর্মকর্তার (এটিও) কার্যালয়ে অভিযুক্ত, অভিযোগকারী ও ওই ট্রেনে কর্তব্যরত বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মোট আট জনকে ডাকা হয়েছিল এদিন। শুরুতেই তদন্ত কর্মকর্তার সামনে হাজির হন বরখাস্ত (পরে বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার) টিটিই শফিকুল ইসলাম।

আরও পড়ুন-

বিজ্ঞাপন

তদন্ত কমিটির এই আহ্বানেই রেলওয়ের পাকশী কার্যালয়ে হাজির হন ইমরুল কায়েস প্রান্ত। এসময় সেখানে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীরা তার মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি ক্ষোভ জানান। বলেন, গত কয়েকদিন ধরে গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নে তিনি ও তার পরিবার বিরক্ত ও বিব্রত।

তিনি আরও বলেন, আপনারা বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করছেন। এটি না করলেও পারতেন। আমি যা বলার, তদন্ত কমিটিকে বলেছি। আপনাদের সঙ্গে কোনো কথা নেই।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, ঈশ্বরদীর সন্তান প্রান্তের মা ইয়াসমিন আক্তার নিপা। তিনি মন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মী আক্তার মনির মামাতো বোন। সে হিসাবে সম্পর্কে মন্ত্রীর স্ত্রীর ভাগনে হন প্রান্ত।

মন্ত্রীর স্ত্রীর আত্মীয়দের বিনা টিকিটে ট্রেনে চড়া ও টিটিই’র বরখাস্তের ঘটনাটি গত ক’দিন ধরেই দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (৫ মে) রাতের পাবনার ঈশ্বরদী থেকে তিন যাত্রী বিনা টিকিটে ঢাকাগামী ট্রেন আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেসে উঠে এসি কামরায় বসেন। ওই ট্রেনের টিটিই শফিকুল ইসলামের টিকিট চাইতে গেলে তারা নিজেদের রেলপথমন্ত্রীর নিকটাত্মীয় বলে পরিচয় দেন। কিন্তু টিটিই তাতে না দমে গিয়ে তাদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করেন এবং এসি কামরা ছেড়ে সুলভ কোচে বসতে বলেন।

পরদিনই শফিকুল ইসলামকে বরখাস্ত করা হয়। গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশ হলে জানা যায়, ওই তিন যাত্রীর মধ্যে এক জন রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর মামাতো বোনের ছেলে, বাকি দু’জন তার মামা। তিন জনকে জরিমানা করার পর মন্ত্রীর স্ত্রী রেলওয়ে পাকশী বিভাগের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তাকে (ডিসিও) ফোন করেন। এর পরপরই পাকশীর ডিসিও বরখাস্ত করেন ওই টিটিই’কে।

শনিবার (৭ মে) এ বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গণমাধ্যমকে বলেন, বিনা টিকিটে ভ্রমণ করা যাত্রীরা তার আত্মীয় নন। কেউ হয়তো তার নাম ভাঙিয়ে সুবিধা নিতে চেয়েছিলেন। তবে পরদিন, তথা আজ রোববারই (৮ মে) তিনি নিজ দফতরে এক ব্রিফিংয়ে স্বীকার করে নেন, তারা তার স্ত্রীর আত্মীয়। বিয়ের মাত্র ৯ মাস হওয়ায় এখনো তিনি স্ত্রীর পক্ষের আত্মীয়দের চিনতে পারেননি বলেই আগের দিন আত্মীয়তার কথা অস্বীকার করেছিলেন।

বিজ্ঞাপন

এদিন মন্ত্রী আরও জানান, এরই মধ্যে টিটিই শফিকুল ইসলামকে বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পাকশী বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন তথা যিনি টিটিই’কে বরখাস্ত করেছিলেন, তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে বলা হয়েছে।

পরে রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে এক অফিস আদেশও জারি করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, মন্ত্রীর আত্মীয় বা স্বজন পরিচয়ে কেউ বাড়তি সুবিধা দাবি করলেই যেন সে সুবিধা না দেওয়া হয়। এ ধরনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য এবং দাফতরিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে কোনো কার্যক্রম গ্রহণ না করার জন্য অফিস আদেশে বলা হয়েছে।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন